https://dupurmitra.wordpress.com/2015/02/20/%e0%a6%8f%e0%a6%95-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%a5%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be-%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%9c%e0%a7%87%e0%a6%b0/

এনিমেল পোয়েট্রি নিয়ে সবচেয়ে ভাল কাজ করেছিলেন টেড হিউজ। তারপর এই ধরনের কারও কাজ আছে কিনা জানা নেই।  আর বাংলা ভাষায় কেউ এমন কাজ করেছেন কিনা সেটাও জানি না। এনিমেল পোয়েট্রি নিয়ে আমার কিছু কাজ আপানাদের সামনে উপস্থাপন করা হল। এখানে সর্বমোট ৫০ টি কবিতা রাখা হয়েছে। আপনাদের উৎসাহ আমার প্রেরণা। নমস্কার।

ব্যাখ্যা ১

দুপুর মিত্র

দীর্ঘদিন ট্রেন অচল থাকলে রেললাইন ঘাসে ঢেকে যায়

বা ঘাসগুলো লোহার শক্তপাতগুলোকে তার নরম শরীর দিয়ে ঢেকে রাখে

এর ব্যাখ্যা ?

এর আবার ব্যাখ্যা কি ?

এটাই তো স্বাভাবিক

ট্রেন যখন চলে

তখন ঘাসগুলো তো রেললাইনের কাছেই আসতে পারে না

ট্রেন না চললে ঘাস সহজেই কাছে আসতে পারে

তারপর তার নরম শরীর দিয়ে লোহার শক্তপাতগুলোকে জড়িয়ে ধরে

আর তাই রেললাইনকে ঘাসে ঢেকে থাকতে দেখা যায়

হয়ত ঘাসগুলো রেললাইনকে বলে

তোমার শরীর এত শক্ত অথচ কত নিথর

এর মাঝে কোনও দর্শন?

এর মাঝে কোনও দর্শন নেই

শুধু মনে হয়

তোমার যেমন দুটি পা আছে

তেমনি রেললাইনও দুইটি

ব্যাখ্যা ২

কাঁচা রাস্তায় যখন বৃষ্টি হয়

গ্রামের এই রাস্তাগুলো ভরে যায় কাঁদা আর পানিতে

আর যখন শুকনো থাকে

ধূলোয় ভরে যায় সে সসব রাস্তা

আমি একদমই হাঁটতে পারি না

পাকা রাস্তা

শহরের অনেক বড় বড় পাকা রাস্তা

গাড়িতে গিজিগিজি থাকে সেসব

সেসব রাস্তায় নামাই যায় না

ফুটপাতেও এত মানুষ আর

ছোট ছোট ফুটপাতের দোকান

যে সেসব ভেদ করে আমার প্রায়ই মনে হয়

এই রাস্তা আমার নয়

এই রাস্তায় কখনই বোধহয় হাঁটা হবে না আমার

‘দেখ তোমার এই রাস্তায় হাঁটতে না পারাটা কোনও কবিতা নয়

এটা ব্যর্থতা

গলায় ঠাণ্ডা লেগে থাকার মত চাপা কষ্ট এসব।

বরং এমন কিছু বল

যাতে করে তুমি হাঁটতে পার

পার হতে পার রাস্তার পর রাস্তা।’

আমার জানা নেই সেসব

শুধু ঘর থেকে সকালে বেরুতে গেলেই

আমার পা আটকে রাখে এখন জুতা।

ব্যাখ্যা ৩

যখন কেউ তাকান না

তখন আকাশে চাঁদও উঠে না

যখন কেউ আমাদের বাড়ির দিকে তাকান না

আমাদের বাড়িটিও অদৃশ্য হয়ে যায়

এভাবে অনেক কিছুই অদৃশ্য হয়ে যায়

আর অদৃশ্য হওয়ার মানে হচ্ছে

এর কোনও ইতিহাস নেই

ঐতিহ্য নেই

এভাবে অনেক কিছুর অস্তিত্ব থেকেও থাকে না

অথচ তার থাকার কথা ছিল

“কেউ তোমাদের বাড়ির দিকে তাকায় নি মানে তো আর

কেউই তাকায়নি এমন নয়

একজন তো তাকাবে নিশ্চিত

আর কেউ না তাকালেই তার অস্তিত্ব থাকে না

ইতিহাস ঐতিহ্য থাকে না

এমন কথাও ঠিক নয়’

জানি তুমি এভাবেই বলবে

জল যেমন কঠিন হয়

তেমনি তরল আর বায়বীয়ও হয়

কিন্তু জল যখন কঠিন আর বায়বীয় থাকে

তখন কেউ আর বলে না এখানে জল আছে

ব্যাখ্যা ৪

ঘর থেকে সবাই বের হয়

আমিও

আমি হয়ত বেশি বের হই

এই বেশি বের হওয়ার কোনো ব্যাখ্যা নেই

সবসময় সবকিছুর ব্যাখ্যা থাকে না

আর থাকলেও এত ব্যাখ্যা দিতে ভাল লাগে না

‘তারপরও তোমার ঘরের বাইরে যাবার মাত্রাটা অনেক বেশি”

বেশি হয়ত বা

বা বাহিরকেই হয়ত আমার ঘর মনে হয়

এই কথারও ব্যাখ্যা আছে

ব্যাখ্যা নেই একটা জিনিসের

আমি ঘরে আসলেই দেখি

আসবাপত্রসব নতুন করে সাজানো

প্রতিবারই যখন ঘরে ফিরি

প্রতিবারই কে যেন আমার ঘরের আসবাবপত্র

নুতন করে সাজিয়ে রেখে যায়

ব্যাখ্যা ৫

টিয়া পাখির গায়ের রং সবুজ

এই সবুজ রঙের কারণে সবুজ পাতার ভেতর সে লুকিয়ে থাকতে পারে

এমনভাবে সে সবুজ পাতার সাথে মিশে যায়

শত্রুরা তাকে চিনতে পারে না

এই সবুজ রঙের কারণ যথেষ্ট আদরও কুড়োয়া সে

টিয়া পাখি শত্রুর চোখ এড়িয়ে প্রেমিকাদের আদর নিয়ে এভাবেই বেঁচে থাকে

মানুষেরও গায়ের রঙ আছে

তবে মানুষ পোশাক দিয়ে গায়ের রঙ ঢেকে রাখে

এক এক পোশাকের রঙ এক এক রকম হয়

সবুজ রঙ দেখলে টিয়া পাখি চেনা যায়

কিন্তু পোশাকের রঙ দেখলে মানুষ চেনা যায় না

এজন্য মানুষ সভ্যতাকে গালি দেয় পোশাকি সভ্যতা বলে

কিন্তু নতুন নতুন পোশাক পড়লে মানুষকে অনেক সুন্দর দেখায়

নতুন নতুন পোশাক পাল্টালে

নতুন নতুন চাকরি হয়

নতুন নতুন প্রেমিকা হয়

যখনই আমি পুরনো পোশাক পাল্টে নতুন পোশাক পড়ি

তখন অনেকেই বলেন

এমনকি তুমিও বল

আপনাকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে

ব্যাখ্যা ৬

যখন তুমি আমার পাশে থাক

তখন এমন আকাশ চাই

যে আকাশে কোন তারা থাকবে না

কারণ তোমার চোখই কেবল তারার মত জ্বল জ্বল করবে

এটা শুধু চাওয়াই

এবং এটা অবাস্তব মিথ্যে

এই চাওয়ার কথা কখনই আকাশ শুনবে না

যখন রাত আসবে

ধীরে ধীরে পা ফেলবে আমাদের বাসায়

তখন সবকিছুই অন্ধকার হয়ে যাবে

আমিও ঢুকে যাব অন্ধকারে

আমার কথাও তুমি শুনবে না

জানতে পারবে না

এমন ব্যাখ্যাতীত অবাস্তব বিষয় বলেই

হয়ত কখনই বোঝাতেও পারব না

কোনও কোনও কান্নায় চোখে জল আসে না

ব্যাখ্যা ৭

হাতিরা যদি কোনও মৃত হাতির হাড় দেখতে পায়

তারাও কবর খোঁড়ে

পাতা খড়কুটো দিয়ে মৃত হাতির দেহ ঢেকে দেয়

তারা নিয়মিত সেই কবরের পাশে আসে

কবরের পাশে দাঁড়িয়ে হাতিরাও কি যেন মনে করে

মৃত হাতির কবরের পাশে দাঁড়িয়ে

হাতিরাও কি ভাবে

মৃত্যুই হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্বাধীনতা।

ব্যাখ্যা ৮

আমার দাদা খরগোশ পালতেন

ফুটফুটে দুধের মত সাদা দুইটি খরগোশ ছিল

আমার বাবা আর আমার একটি প্রধান কাজ ছিল

খোরগোশের খাবার খাওয়ানো

খোরগোশগুলো সারা বাড়ি দৌঁড়ে বেড়াত

আর আমার দাদাকে দেখলেই আনন্দে লাফিয়ে

কুলে ওঠে যেত তার

দাদা বলতেন

খোরগোশরা একই এলাকায় বেশি দিন থাকতে পারে না

মানুষের মত তারাও একই স্থানে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যায়

এবং এক সময় মারা যায়

এজন্য আমার দাদা

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগাতেন

আসবাবপত্র কিছুদিন পর পর একটু পরিবর্তন করে রাখতেন

যাতে করে খোরগোশ মনে করে পারে

এটা একই জায়গা নয়

একদিন খোরগোশকে রেখে আমার দাদা চলে গেলেন

আর ফিরলেন না

আর খোরগোশ দুটোও হারিয়ে গেল

আমরা অনেকদিন খোরগোশ দুটোকে খুঁজেছি

আর পাইনি

দাদা নেই

ইদানিং অনেক রাতে খোরগোশ দুটো আসার শব্দ আমরা শুনতে পাই

ব্যাখ্যা ৯

ঘোড়া যখন তার মাথা নামিয়ে রাখে

তখন বুঝতে হয়

সে খুব হতাশ অথবা ক্লান্ত অথবা আপনার প্রতি সম্পূর্ণ সমর্পিত

ঘোড়া মাথা যখন উঁচুতে রাখে

তখন বুঝতে হয় তার শরীর আর মন দুটোই ভাল

আর যখন সে লেজ উঁচু করে থাকে

তখন বুঝতে হয়

সে খুবই ভাল

ঘোড়ার যখন একটি চোখ খোলা থাকে

তখন বুঝতে হয় তার শরীর এতটাই খারাপ যে

তার চিকিৎসা করাতে হবে

আর যখন তার কান সামনের দিকে থাকে

তখন বুঝতে হবে সে খুবই মনোযোগ কোন একটা কিছু শুনছে

একদিন এমন ঘোড়া করেই রাজকুমার আসে

আর রাজকুমারিকে ঘোড়ায় করে নিয়ে যায় নিজের প্রাসাদে

এই ঘোড়া করেই একদিন সাম্রাজ্য জয় হয়

আভিজাত্য ফুটে ওঠে

যে যত বেশি ঘোড়াকে চেনে

সে তত বেশি পরাক্রমী

ব্যাখ্যা ১০

পাখিরা উড়তে উড়তে এক দেশ থেকে চলে যায় আরেক দেশে
হাজার হাজার মাইল তারা উড়ে উড়ে পারি দেয়
এসময় তাদের একজন দলনেতা থাকে
যে আগে এমন পথ পারি দিয়েছিল

সে থাকে সবার আগে
তার দায়িত্বও থাকে অনেক
দলনেতা পাখি যেহেতু সবার আগে থাকে
সেহেতু যে কোন বিপদের মোকাবেলা তাকেই করতে হয়
প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টিতে মৃত্যুর সবচে বেশি ঝুকি তারই
কারণ সে দলনেতা
নিচ থেকে দেখলে মনে হয়
একটি বড় উড়ো জাহাজের ডানা উড়ে যাচ্ছে
প্রথমে একটু আগে থাকে দলনেতা পাখি
আর তার দৃইপাশে একটু পেছনে থেকে উড়ে অন্য পাখিরা
মানুষেরও দলনেতা থাকে
মানুষের দলনেতাদের অনেক বাড়িগাড়ি থাকে
দলনেতারা অনেক মানৃষকে মেরে নিজে বড়লোক হয়
পাখিদের দলনেতারাও কি এমন বড়লোক হয়

ব্যাখ্যা ১১

সিংহ যখন তরুণ থাকে

তখন কেউ তার পাশে আসতে পারে না

সে একাই শিকার করে

শিকার ধরে খায়

একা একাই ঘুরে বেড়ায়

কখনও শুধু তার পরিবার নিয়েই থাকে

কখনও কখনও তাদের একটি দল থাকে

সেই দলের একটা এলাকা থাকে

অন্য দলের সিংহরা সেখানে প্রবেশ করতে পারে না

কিন্তু সিংহ যখন বুড়ো হয়ে যায়

তখন সে অনেক বেশি একা হয়ে পড়ে

তখন সে শিকারও করতে পারে না

তখন অন্য সিংহের শিকার করা খাবার সে খায়

মানুষেরাও বুড়ো হয়ে গেলে একা হয়ে যায়

কখনও কখনও অনেক সিংহ এতটা বুড়ো হয়ে যায় যে

শক্ত মাংস সে খেতে পারে না

অন্য সিংহরা তার জন্য নরম মাংস বের করে দেয়

কিন্তু মানুষের ছেলেমেয়েরা বুড়ো মা-বাবা দেখতে পারে না

বুড়ো মা-বাবাদের নরম খাবার দেবে দূরের কথা

কখনও কখনও মনে হয়

মানুষেরা পশুদের চেয়ে বেশি পাশবিক

আর পশুরা মানুষের চেয়ে বেশি মানবিক

ব্যাখ্যা ১২

অনেকেই পাখি পুষে

পাখিকে নিয়মিত খাবার দেয়

পাখিকে কথা বলা গান গাওয়া শেখায়

পাখিরা কথা বললে অনেকেই বেশ খুশি হন

কিন্তু আমি পাখি পুষি না

কারণ আমার হৃদয়টাই একটা পাখি

আমি একে ঠিকঠাক খাওয়াতে পারি না

তারপরও সে আমার চেয়ে অনেক বেশি কথা শিখে ফেলেছে

আমার চেয়ে ঢের বেশি বোঝে গানের কথা

ঢের বেশি গায় গান

হৃদয়টা কথা বললে

গান গাইলে আমার ভাললাগে

এজন্য পাখিটাকে আমি খাঁচায় রাখি

খাঁচায় বন্দী পাখিটা কথা বলে গান গায়

আমি একে খাওয়াতে পারি না

বরং সিগারেটের ধোঁয়ায় সে ঢেকে থাকে

সিগারেটের ধোঁয়ায় পাখিটার রং কালো হয়ে গেছে

রাতে কেমন কাঁপতে থাকে

কাঁদতে থাকে

হয়ত পাখিটা একদিন মরে যাবে

ব্যাখ্যা ১৩

চাঁদের নিচে একটি শেয়াল কাঁদছে

যে শেয়াল এত ধূর্ত এত চালাক এত জ্ঞানী

তার কি এমন কষ্ট থাকে যে সারারাত তাকে

চাঁদের আলোর নিচে কাঁদতে হয়

জ্যোৎস্নার আলোয় ভিজতে হয়

হয়ত সে ফিরে এসে দেখেছে

মাটির ঘর থেকে তার বাচ্চাকে ধরে নিয়ে গেছে কেউ

শীতে সে কাঁপছে

রাতভর জোরো জোরে কাঁদছে

রাতভর শেয়ালের মা তার বাচ্চাকে খুঁজছে

রাতভর শেয়াল মা শিকারিকে খুঁজছে

রাতভর জ্যোৎস্নার আলো চিকচিক করছে

শেয়ালের চোখে

ব্যাখ্যা ১৪

চাবুকের মত মেরুদণ্ড নিয়ে একটি চিতা যখন দৌঁড়ুয়

লম্বা লম্বা পা ফেলে

পাতলা শরীর আর ছোট মাথা নিয়ে এগুতে থাকে

যখন সে দৌঁড়ুয়

মনে হয় বাতাসে সে ভেসে আছে

এত অদ্ভুত সুন্দর ছোপ ছোপ দাগের শরীর নিয়ে

এত দ্রুত একটি শিকার ধরে ফেলে

মনে হয়

একটা অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য আজ দেখা হল

মনে হয়

শিকার দৃশ্যও কখনও কখনও সুন্দর হয়

ব্যাখ্যা ১৫

বাঘের থাবার নিচে পৃথিবীটা কত অসহায়

অথচ চিড়িয়াখানায় সেই বাঘই

কতটা ক্লান্ত পরিশ্রান্ত অসহায় হয়ে ওঠে

চিড়িয়াখানায় এক একটি খাঁচার ভেতর

প্রতিটা প্রাণীই কেমন অসহায়

যদিও সে এখানে বড় হয়

প্রেম হয়

নতুন সন্তান আসে

বনে প্রতিটা প্রানীই থাকে মুক্ত স্বাধীন আর অনেক শক্তিশালী

আর চিড়িয়াখানায় সে পরাধীন

দুর্বল

কে জানে

শরীর নয় মেধা নয় অস্ত্র নয়

কেবল স্বাধীনতাতেই শক্তি লুকিয়ে থাকে

ব্যাখ্যা ১৬

সিংহরা অনেক সুন্দর
সিংহের বাচ্চারা আরও বেশি সুন্দর
ওদেরকে দেখলেই
আদর করতে ইচ্ছে হয়
কুলে নিতে ইচ্ছে হয়
চুমু খেতে ইচ্ছে হয়
সিংহের সৌন্দর্য মানুষকে
নিশ্চুপ আর বিমুগ্ধ করে তোলে
সিংহের সৌন্দর্য সতর্কতার সাথে উপভোগ করতে হয়
যে কোন অসতর্কতায়
সৌন্দর্যসিংহ গিলে খেতে পারে তোমায়

ব্যাখ্যা ১৭

ঘাসফড়িং এক ঘাস থেকে উড়ে যায় আরেক ঘাসে

ঘাসে ঘাসে বসে গান করে সে

গান গায় আর

নরম নরম ঘাসের পাতা খেয়ে নেয়

ছোট বেলায় ঘাসফড়িঙয়ের লেজে সুতা বেধে দিতাম

সেই সুতা নিয়েই ঘাস ফড়িং উড়ে বেড়াত

সুতাসহ ঘাসফিড়ঙের উড়ে বেড়ানো

আমাকে অনেক আনন্দ দিত

আনন্দে লাফিয়ে লাফিয়ে বলতাম

এটা আমার ঘাসফড়িং

এটা আমার ঘাসফড়িং

প্রকৃতিকে নিজের করে পাবার ভেতরেই তাহলে

আনন্দ থাকে

ব্যাখ্যা ১৮

বাঘ হরিণকে শিকার করে তখনই

যখন তার খিদে লাগে

যখন তার বেঁচে থাকার জন্য

কোনও না কোনো শিকার করতেই হবে

কখনই বাঘ বনের সব হরিণ খেয়ে ফেলে না

সিংহও তেমনি

সব প্রানীই তেমন

কেবল প্রয়োজন হলেই

কেবল বেঁচে থাকার তাগিদেই

তারা শিকার করে

ওরা যুদ্ধ বা লড়াইও করে

কেবল বেঁচে থাকার তাগিদে

একমাত্র মানুষই বেঁচে থাকার পরও

ভরপেটে সুখে থাকার পরও

যুদ্ধ করে

লড়াই করে

নিজেদেরকে নিজেরাই হত্যা করে

নাই হয়ে যেতে চায়

ব্যাখ্যা ১৯

ঈগল
দূর পাহাড়ে বসে থাকে
একা একা রাজার মত
যেন রাজারা চিরকাল একা
শ্যেন দৃিষ্টতে তাকিয়ে থাকে

একা একা অনেক উঁচুতে উড়তে থাকে
আর খুঁজতে থাকে শিকার
ঠিক যেন আমেরিকা

ব্যাখ্যা ২০

কৈ মাছ কোন ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে
কার কথা ভেবে হঠাৎ সে লাফিয়ে আসে ডাঙ্গায়
তারও কি ঘুম ভেঙে যায়
হতে পারে কাউকে বেশিই ভালবাসত সে
আকাশ মেঘ করে এলে কারও কথা হয়ত মনে পড়ে যায় তার
মাটিতে বৃষ্টির ফোঁটা নেচে ওঠলে
বেজে ওঠলে নূপুরের শব্দ
হয়ত সে হারিয়ে ফেলে হুঁশ
এক লাফে ওঠে আসে ডাঙ্গায়

ব্যাখ্যা ২১

কোথাও কোনো শকুন উড়ে বেড়াতে দেখলেই বোঝা যায়
মরা পড়ে আছে
একটা প্রাণহীন দেহ পড়ে আছে কোনো
প্রাণহীন কিছু সহজেই টের পায় শকুন
অনেক দূর থেকে নিস্প্রানের কাছে
উড়ে আসে হাজার হাজার শকুন

শকুনেরা কি প্রাণহীন হৃদয়হীন মানুষ ও টের পায়

ব্যাখ্যা ২২

আমাদের বাসায় এক জোড়া কবুতর ছিল
ওরা খেলত উড়ে বেড়াত খাবার খেত
একদিন মেয়ে কবুতরটি অসুখে মারা গেল
এরপর থেকে দেখা গেল ছেলে কবুতরটি
ঘর থেকে বের হয় না
সামনে খাবার রেখে দিলে খাবার খায় না
গান গায় না
ছেলে কবুতরের সামনে এত খাবার রাখার পরও সে না খেয়ে থাকে
এমন না যে মেয়ে কবুতরের মত তারও হয়েছে গভীর কোনো অসুখ
তাহলে শরীরের অসুখ ছাড়াও
কবুতরের অন্য কোনো অসুখ হয়
কবুতররাও সঙ্গীহীন একা হয়ে পড়লে
না খেয়ে মরে যায়
অথবা চলে যায় নিরুদ্দেশ

ব্যাখ্যা ২৩

শহরে প্রচৃর কাক উড়ে
সকাল দুপুর এরা কা কা করতেই থাকে
শহরে রাস্তায় ডাস্টবিনে অনেক পঁচা গলা খাবার পড়ে থাকে
কাক এসব খায় আর গান গায়
কাকের দিকে তাকালেই মনে হয়
এরা কেমন তৃষ্ণার্ত
এরা কেমন অস্থির ছটফটে
এদের চেহারা কেমন রুক্ষ
আর গানগুলোও বিরক্তিকর
শহরে কোকিল থাকে না
শহরকে মনে হয় কাকেদের দেশ

আর গ্রামে তেমন কাক দেখা যায় না
কোকিলের সংখ্যাই বেশি
কোকিলের স্নিগ্ধ রূপ আর সুমিষ্ট গান
দুটোই গ্রামে দেখা যায়
কাক আর কোকিলের মত গ্রাম আর শহরের ঝগড়া হয় না
কেবল দেখা যায়
দলবেঁধে কোকিলেরা কাক হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে শহরে

ব্যাখ্যা ২৪

ভয় বেঁচে থাকার একটা বেশ বড় কৌশল
হয়ত ভয় না থাকলে
কোনো কোনো প্রাণি বিলুপ্তই হয়ে যেত
যেমন ধরুন হরিণ
হরিণেরা কেবল ঘাস বা গাছের পাতা খায়
ওরা শিকার করে না
শিকার কিভাবে করতে হয় এটা তাদের জানা নেই
শিকার জানেনা বলে
অন্য কেউ শিকার করতে এলে তাকে
তার প্রতিরোধও জানে না
ভয়ই হরিণের একমাত্র বেঁচে থাকার কৌশল

ভয় গরীব মানুষেরও একমাত্র বেঁচে থাকার কৌশল

ব্যাখ্যা ২৫

যে পুরুষপাখির বাসা সুন্দর হয়
যে পুরুষপাখির বাসা শক্ত মজবুত হয়
সেই পুরুষপাখির বাসা নারীপাখি ওঠে
সেই পুরুষপাখিকে নারীপাখি ভালবাসে
এজন্য পুরুষপাখিরা সারাজীবন দিয়ে
মেধা দিয়ে
শ্রম দিয়ে ঘর বানায়
যেন কোন নারীপাখি সহজেই ঘর দেখলে প্রেমে পড়ে যায় তার
যে পুরুষপাখি ঘর বানাতে পারে না
সে পুরুষপাখির ঘর তেমন সুন্দর হয় না
সেই পুরুষপাখি হয়ত সারাজীবন একাই কাটায়
হয়ত কোনো নারীপাখি তার দিকে ফিরেও তাকায় না

এখানেও হৃদয় নেই
পুরুষহৃদয় নয় পুরুষক্ষমতার প্রেমে পড়ে নারীপাখিরা

ব্যাখ্যা ২৬

সমুদ্রে যে সমস্ত মাছ আকারে বড়
আর হিংস্র তারা একা থাকে
একা একাই তারা সমুদ্র ঘুরে বেড়ায়
কারন তাদেরকে কেউ আক্রমণের সাহস পায় না
অথবা এরা নিজেরাই শিকারের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে
যদি তাদের কেউ হামলা করে হামলাকারীদের চরমমূল্য দিতে হয়
কিন্তু যে সমস্ত মাছের আকার ছোট
তারা একসাথে ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরে বেড়ায়
কোনো কোনো ঝাঁকে এক লাখ বা তারও বেশি মাছ থাকে
এতে তাদের ওপর হামলা হলেও
ক্ষতি কম হয়
সমুদ্রের মত স্থলভাগ নয়
এখানে বড় লোক মানুষের মত গরীবও একা
আর ক্ষতের পরিমাণও বেশি

ব্যাখ্যা ২৭

বানরেরা দলে বিভক্ত হয়ে বসবাস করে
দল ধরে খাবার সংগ্রহে বের হয়
এক একটি এলাকা এক একটি দলে ভাগ থাকে
দলে দলনেতা থাকে
মানুষের সমাজের মত বানরদেরও রীতিনীতি আছে
দলের ভেতর যে বানরগুলো বুড়ো হয়ে যায়
তারা আর দলে থাকতে পারে না
বা দলত্যাগ করে
বানররাও যে বৃদ্ধ, বয়স হয়েছে বলে কাজ করতে পারে না
এক গাছ থেকে আরেক গাছে যেতে পারে না
তাদেরকে আর দলে রাখে না
অথচ এই দলকেই হাতেনাতে শিখিয়েছে সে
বানরেরাও মানুষের মত বুড়োদের একা করে দেয়
বুড়ো বানরেরা মানুষের দোকানের সামনে বসে উচ্ছিষ্ট খাবার খায়
আর ভাবতে থাকে
প্রকৃতি কত নিষ্ঠুর
যোগ্যতা একটু হেরফের হলেই প্রকৃতি কত বিরূপ হয়ে উঠে

ব্যাখ্যা ২৮

বাঘ কখনো মানুষ হয় না
কিন্তু মানুষের মাংসের স্বাদ পেলে
বাঘ হয়ে উঠে মানুষ খেকো বাঘ
মানুষ খেকো বাঘ তখন আলাদা প্রজাতি হয়ে যায়
তারা মানুষের মাংস ছাড়া আর কিছু খেতে চায় না

মানুষও মানুষের মাংস খায় না
কিন্তু যে মানুষ মানুষের মাংসের স্বাদ পায়
সে হয়ে উঠে মানুষ খেকো মানুষ

ব্যাখ্যা ২৯

জিরাফ মাঠের ঘাস খেতে চাইত না
মাথা নিচু করে কিছু খাইত না
কেবল গাছের উপরের পাতা খাইত
উপরের জিনিস খেতে খেতে জিরাফের গলাও ধীরেধীরে লম্বা হয়েছে
এভাবে মানুষের গলাও লম্বা হয়
জিরাফের লম্বা গলা দেখা যায়
মানুষের লম্বা গলা দেখা যায় না

ব্যাখ্যা ৩০

পাখিরা বেঁচে থাকার জন্য এক দেশ থেকে
আরেক দেশে যায়
তখন তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়
না খেয়ে থাকতে হয় অনেক দিন
বিশ্রামেরও সময় থাকে না
অনেক ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তাদেরকে উড়তে হয় মাইলের পর মাইল
এ সময় অনেক পাখি মারাও যায়
ওরা যখন মাইলের পর মাইল উড়তে থাকে
তখন মনে হয় একটি জাতিকে রক্ষা করার জন্য কত কষ্টই না করতে হয়
আত্মাহুতিও দিতে হয়
পাখিদেরও তাই

ব্যাখ্যা ৩১

আমি বিড়াল পুষি
বিড়াল আমার কাছে খুবই আদরের প্রাণি
বিড়ালকে প্রতিদিনই দুধ আর মাছ খাওয়াই
যেন বিড়ালটি আমার ঘরের সব ইঁদুর খেয়ে ফেলে
প্রতিরাতে বিড়ালটি ইদুঁরের পেছনে দৌঁড়োয়
প্রতিরাতে ইদুঁরেরা কাটতে থাকে আমার সংসার

ব্যাখ্যা ৩২

রানী মৌমাছিরা আকাশে উড়তে থাকে

পুরুষ মৌমাছিরাও উড়তে থাকে মিলনের জন্য

তাদের প্রতিযোগিতা হয়

এতে কেউ কেউ মারা যায়

যে পুরুষ রানী মৌমাছির সাথে উড়তে উড়তে মিলিত হয়

সেও মারা যায় সংগমের পর

পুরুষের জন্ম যেন শুধু এই সংগমের জন্য

সংগম শেষেই মৃত্যু

সুখের তৃপ্তি সাথে নিয়ে মৃত্যু

যেন সংগম আর মৃত্যুর আর কোনো ফারাক নেই

ব্যাখ্যা ৩৩

স্বাধীনতার মত

অনেকে খাঁচায় থাকার মত পরাধীনতাও চায়

এটা আমি নিশ্চিত

খাঁচায় বন্দী বাঘের সংসার

খাঁচাবন্দী পাখির গান

এসবের প্রমাণ

পরাধীনতা মারাত্মক বিষ হলে

খাঁচাবন্দী বাঘের সংসার হত না

আর গান গাইত না খাঁচাবন্দী পাখি

ব্যাখ্যা ৩৪

চিল আকাশে উড়তে উড়তে এক সময় বিন্দু হয়ে যায়
তার আর কোনো ছায়া পৃথিবীতে পড়ে না আর

ব্যাখ্যা ৩৫

কান্না যে কোনো মানৃষকে অনুরক্ত করে তুলে
কেউ কেউ কান্নার প্রেমে পড়ে যায়
কেননা সে হয়ত জানে
জলসাপে কোনো বিষ থাকে না

কিন্তু অতিরিক্ত কান্না থেকে দূরে থাকে মানুষ
সে চোখ বুজে থাকে
কান্নারত মানুষকে দেখতে চায় না সে
কেননা সে হয়ত জানে
সামুদ্রিক সাপ অনেক বিষধর হয়

ব্যাখ্যা ৩৬

ইদানিং রাস্তায় বেরুলেই দেখি প্রকাণ্ড একটি সাপ

কয়েক হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ

এতটা দীর্ঘ যে কেউ একে দেখতে পায় না সহজে

ছুঁইতে পায় না

সাপটির উপর দিয়েই মানুষ হেঁটে যায়

সাপটি হঠাৎ হঠাৎ পেছনে থেকে ছোবল দেয়

আর তাই মাঝে মাঝে মৃত মানুষ পড়ে থাকে

বিষে নীল হয়ে পড়ে থাকে মৃত মানুষের শরীর

ব্যাখ্যা ৩৭

ময়ূর যখন পেখম মেলে

সমস্ত আকাশ ঢেকে যায়

অন্ধকার করে আসে আকাশ

সবাই ভাবে এই বুঝি নামবে বৃষ্টি

কিন্তু বৃষ্টি আর নামে না

সারা পৃথিবী ছড়িয়ে পড়ে ময়ূরের পেখম

ব্যাখ্যা ৩৮

তুমি যখন তাকাও

হরিণের চোখের সাথে তোমার চোখের মিল পাওয়া যায়

আমার তোমার এই হরিণ চোখ ভাল লাগে

টের পাই তোমার মধ্যে এক নিষ্পাপ হরিণ পশু বসবাস করে

তুমি যখন গান গাও

তোমার এই গান গাওয়া কোনও এক পাখির গানের সাথে মিলে যায়

তোমার কণ্ঠে পাখির সুমিষ্ট গান আমার ভাললাগে

টের পেতে থাকি তুমিই যেন পাখি

তুমি যখন একা হয়ে যাও

আমার কোনো এক বাঘিনীর কথা মনে পড়ে

যে বাঘিনী এক রাতে খেয়ে নেবে আমায়

টের পাই তোমার ভেতরে অনেক নিষ্পাপ পশুর বসবাস

তোমার পশুত্বকে তখন আমার ভাললাগে

ব্যাখ্যা ৩৯

নি:সঙ্গতা অজগরের মত
একে একে সব খায়।

ব্যাখ্যা ৪০

বানরকে শেকলে বেধে মালিক কত কিনা খেলা দেখায়
খেলার দৃশ্যের কাছে শেকল কেমন ম্লান হয়ে যায়
বানরের কান্না আর শেকল ও কেমন খেলার অংশ হয়ে যায়

ব্যাখ্যা ৪১

যাদের শরীর ফর্সা
তাদের উপর থাকে চিত্রল হরিণের ছায়া
তারা এক ঘর থেকে দৌঁড়ে বেড়ায় অন্য ঘরে

যাদের চোখ বড়
তাদের উপর থাকে গরুর ছায়া
এরা হয় খুব আদরের

যাদের নাক অনেক লম্বা
তাদের উপর থাকে ঘোড়ার ছায়া
সে যুদ্ধোন্মাদ হয়

তারপর যেদিন এই তিন জনের দেখা হয়
সেদিন থেকে তারা একে অপরের বন্ধু হয়ে যায়

ব্যাখ্যা ৪২

নির্জন দুপুরে বন বিড়ালের মত ঢুকে যাব তোমার ঘরে
মাছ-মাংস খেয়ে চলে আসব বনে।
খুঁজেও পাবে না।
যে বিড়াল বনে বনে ঘুরে বেড়ায়
তাকে কেউ খুঁজে পায় না কোনো দিন।
কেবল নির্জন দুপুরে কারও ঘরে ঢুকে পড়ে চুপিচুপি।

ব্যাখ্যা ৪৩

হঠাৎ এমন ভাসতে ভাসতে
কাটতে কাটতে সাঁতার
কোথায় ডুব দাও পানকৌড়ি
কিসের কোন গভীরে যাও
কাকে খোঁজ অতল জলে
পাবে নাকি খোঁজে তাকে আর
জলে ভাসতে ভাসতে
কার কথা এমন মনে পড়ে যায়
আর অমনি জলের ভেতরে ডুব দাও
পাবে কি তাকে আর?

ব্যাখ্যা ৪৪

শীতকালে ব্যাঙ শীতনিদ্রায় থাকে
এতটা নিস্ক্রিয় জীবন আর দেখা যায় না
এতটা নিস্ক্রিয় যে সে খাওয়া দাওয়াও করে না
তারপর শীতনিদ্রা ভেঙে গেলে লোকালয়ে চলে আসে ব্যাঙ
লাফিয়ে মানুষের পায়ের উপর এসে পড়ে
তারপর সে যে পুকুরে ঝাপ দেয়
সে পুকুর থেকে একটি শব্দ বের হয়ে আসে
আর সেই শব্দ অনেক সুরেলা হয়।

ব্যাখ্যা ৪৫

কীটপতঙ্গরাও আলোমুখী
আলোর দিকে আসতে থাকে হাজারে হাজার
আলো অন্বেষণ করে
আলোর পথে চলে

আলো দেখলেই কীটপতঙ্গেরা হাজারে হাজার ছুটে আসে
তাই কীটপতঙ্গ মেরে ফেলার জন্য কেউ কেউ ব্যবহার করে আলোর ফাদ

আলোও ফাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়
আর এসই ফাদে আটকা পড়ে মরে অজস্র কীট

ব্যাখ্যা ৪৬

লোকটা খোলশ পাল্টায়
ধীরে ধীরে খোলশ পাল্টায়
লোকটা সাপের মত খোলশ পাল্টায়
লোকটার উজ্জ্বল শরীর
রোদের আলোয় চিকচিক করে

সাপ খোলশ পাল্টালে অনেক সজীব আর নতুন মনে হয়
লোকটা খোলশ পাল্টালে সাপের মত সজীব আর নতুন মনে হয় না্।

ব্যাখ্যা ৪৭

শব্দের ঝংকার আমার ভাল লাগেনা
তবু রাতের অন্ধকারে ঝংকার তুলে
আমার ফলের বাগানে জড়ো হয় অসংখ্য বাদুর
সারারাত ফল খায়
সূর্যের আলো আসার আগেই
চলে যায় ওরা
কেবল মাটিতে পড়ে থাকে ফলের খোসা

ব্যাখ্যা ৪৮

ছোট বেলায় দেখতাম মুরগীর খোপে মা আট-দশটি ডিম রেখে দিতেন
মুরগী সেখানে তা দিত
এক মাসের মধ্যেই ফুটফুটে বাচ্চা বেরুত ডিম থেকে
বাচ্চাগুলো কিচিরমিচির করত
আমি দৌঁড়ে তাদের ধরতে যেতাম আদর করার জন্য
এই দেখে মা মুরগী তেড়ে আসত আমার দিকে

এক মায়ের কাছ থেকে বাঁচতে আমি দৌঁড়ে আসতাম আরেক মায়ের কাছে।


ব্যাখ্যা ৪৯

লোকটা গরু বেধে রাখার দড়ি
মালার মত গলায় জড়িয়েছে
লোকটা এ কদিন মানুষের মত কথা বলবে না
গরু যেভাবে শুধু মা মা শব্দ করে ডাকে
তেমন করে ডাকবে
কারন লোকটা যে গরু পালত
সেই গরু মারা গেছে
বাড়ির একমাত্র আদরের প্রাণিটির মৃত্যুর পর
রাখালটিই ক্রমে গরু হয়ে উঠছে

ব্যাখ্যা ৫০

যখন মাটিতে কেঁচো জন্মে
কেঁচো থেকে সার হয়
সার থেকে ফসল হয়
সেই ফসল জড়িয়ে কৃষকেরা ঘুমিয়ে পড়ে
ঘুম থেকে ওঠে বাজারে যায়
সদাই পাতি কিনে
বউয়ের জন্য একটা ছোট্ট আয়না
আর মেয়ের জন্য আলতা কিনে
ছেলের জন্য কিনে আনে ধারাপাত

তখন সেই কেঁচো খুরতে খুরতেই একদিন সাপ আসে